গাদ্দাফির হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র আইএসের হাতে!

লিবিয়ায় চার দশকের শাসনকালে নিজের অস্ত্রভাণ্ডারে অন্তত ২০ হাজার বিমান-বিধ্বংসী মিসাইল জড়ো করেছিলেন দেশটির শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি৷ কাঁধে ঠেস দেয়া লঞ্চার থেকে সহজেই ছোড়া যায় মিসাইলগুলো৷
অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের জেরে ২০১১ সালে গদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, বেমালুম নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল সেগুলোর বেশির ভাগই৷ মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মিসাইলগুলো আইএস গ্রুপের সদস্যদের হাতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যার সাহায্যে তারা আফ্রিকা বা ইউরোপের যে কোনো যাত্রীবাহী বিমানের উপর হামলাও চালাতে পারে৷
চার বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ফায়দা তুলে, লিবিয়ার মধ্য-ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী এলাকায় সিরতে শহরকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৪০ বর্গকিমি এলাকা ইতিমধ্যেই দখল করে আইএস৷ পেন্টাগনের অনুমান, সে দেশে অন্তত ১০ হাজার আইএস যোদ্ধা রয়েছে৷ ইরাক ও সিরিয়ায় পশ্চিমী শক্তিগুলির হাতে পর্যদুস্ত হলে তেলের খনি ও ভবিষ্যতের মূল ঘাঁটির জন্য লিবিয়াকে বেছে নিতে পারে আইএস নেতৃত্ব৷
ঠিক এই কারণেই আশঙ্কায় রয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত লিবিয়ায় এখন নিখোঁজ মিসাইলগুলো সন্ধানের জন্য সরাসরি লোক পাঠানোও বিপজ্জনক৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার সামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের চাপ সত্ত্বেও, এখনও লিবিয়া-তিউনিশিয়া সীমান্তে আইএসের প্রশিক্ষণ শিবিরের উপরে বোমা বর্ষণের উপর মার্কিন উদ্যোগ সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষপাতী৷ তবে জঙ্গিদের থেকে অস্ত্র ভাণ্ডার সুরক্ষিত রাখতে উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সরকারকে সাহায্য করছে মার্কিন বিদেশ দপ্তরের একটি উপদল৷
গাদ্দাফির পতনের পর ওবামা প্রশাসনের পাঠানো একটি বিশেষ দল ওই ধরনের প্রায় ৫ হাজার মিসাইল খুঁজে ধ্বংস করেছিল৷ কিন্ত্ত ২০১২-র সেপ্টেম্বরে লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র একটি ঘাঁটিতে জঙ্গিহানা হওয়ায় ওই অভিযানে ইতি পড়ে৷ রাজধানী ত্রিপোলিতে মার্কিন দূতাবাসও বন্ধ হয়ে যায়৷
Read More News

সংশ্লিষ্ট বিশেষ দলের নেতার (নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) কথায়, ‘এখনো অনেক মিসাইল লিবিয়ায় রয়ে গিয়েছে৷ বড় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো ২০১১ থেকেই সেগুলির অধিকাংশ মজুত করেছে৷ কিছু মিসাইল গিয়েছে ছোটখাটো লড়াকু গোষ্ঠীদের হাতে৷ কিছু আবার অস্ত্র পাচারকারীদের মাধ্যমে লিবিয়ার বাইরে চলে গিয়েছে৷ যাতে সিরিয়া, নাইজেরিয়া, সিনাই ও মালির সংঘর্ষ চালিয়ে যাওয়া যায়৷’
যুদ্ধক্ষেত্রে ছোটখাটো অস্ত্রের উত্‍সের সন্ধান করে, লন্ডনের এমন একটি কোম্পানির কর্মচারী টিমোথি মিশেট সম্প্রতি লিবিয়ায় গিয়েছিলেন৷ মরুভূমি শহর সাভায় একদল স্থানীয় যোদ্ধার কাছে গাদ্দাফি আমলের কয়েকটি মিসাইল দেখতে পান তিনি৷ সেগুলি যাযাবর পাচারকারীদের থেকে কেনা হয়েছিল, যারা পার্শ্ববর্তী দেশ শাদের অবৈধ অস্ত্রের বাজারের দিকে যাচ্ছিল৷
কিন্ত্ত আইএস বা লিবিয়ার অন্য উগ্র গোষ্ঠীগুলো সত্যিই ওই মিসাইল পেয়ে থাকলে এখনো কোনো যাত্রীবাহী বিমানের উপরল হামলা করেনি কেন? ‘এটা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন’, বললেন জেনেভার ‘স্মল আর্মস সার্ভে’ সংস্থার গবেষক ম্যাথিউ শ্রোয়েডার৷ তার মতে, ঠিকঠাক সামরিক প্রশিক্ষণ না-থাকায় লিবিয়ার অধিকাংশ সশস্ত্র গোষ্ঠীই ওই মিসাইল ছুড়তে জানে না৷ পাশাপাশি, রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য বিবদমান বড় গোষ্ঠীগুলি বা অস্ত্র পাচারকারীরা নিজেদের স্বার্থেই দেশের বিমানবন্দরগুলিকে বন্ধ করে দিতে চায় না – কোনো যাত্রীবাহী বিমানে হামলা হলে যা অবশ্যম্ভাবী৷

২০১৪-র জানুয়ারিতে একটি সামরিক হেলিকপ্টারকে গুলি করে নামায় মিসরের আইএস-ঘনিষ্ঠ জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার বাইত আল-মকদিস৷ মিসর ও ইসরাইল সরকারের দাবি, সে কাজে গাদ্দাফির মিসাইলই ব্যবহার করা হয়েছিল৷ গত অক্টোবরে একটি রাশিয়ান যাত্রীবাহী বিমানে বোমা রেখে ২২৪ জনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আইএসের মিসর শাখা৷
লিবিয়াতেও আইএস গত ফেব্রুয়ারিতে দু’টি সরকারি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার দাবি করে৷ লিবিয়া সরকার অবশ্য সেই দাবি অস্বীকার করে ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’কে দায়ী করছে৷ কিন্ত্ত এ বার কোনো যাত্রীবাহী বিমানের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটলে মার্কিন সরকার হয়তো দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *