বাংলাদেশভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘আইব্যাকসে’র বিরুদ্ধে জঙ্গিদের অর্থায়ন করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইব্যাকস আইটি ও সফটওয়্যার কোম্পানির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের অর্থায়ন করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিদেশ থেকে অবৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশে টাকা পাঠান। এর মধ্যে দুটি চালান কয়েকজন উগ্রপন্থির হাতে চলে গেছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে আসা ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা জঙ্গিদের হাতে পেঁৗছার আগেই জানতে পেরে তা জব্দ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। স্পেন থেকে ওই চালানটি প্রথমে চীনে পাঠানো হয়। এর পর চীন থেকে তা পাঠানো হয় বাংলাদেশে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আইব্যাকসের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউল হক সবুজসহ সাতজনের নামে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করেছে। সবুজ তার ভাই সাইফুল হক সুজনসহ দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সুজন সিরিয়ায় আছেন। সুজন ও সবুজকে গ্রেফতার করতে এরই মধ্যে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে এ তথ্য জানায়।
তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন ও মানি লন্ডারিং আইনে ইতিমধ্যে দুটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় সবুজের বাবা আবুল হাসনাত, আইব্যাকসের হিসাবরক্ষক নাহিদউদ্দোজা, প্রধান নির্বাহী তাজুল ইসলাম, সাইফুল হক সুজন, তাজুল ইসলাম শাকিল, গালিবসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে একাধিক দফায় রিমান্ডে নেয় ডিবি। এরই মধ্যে সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলাটির তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে মামলাটির চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ মামলার তদন্তে উঠে এসেছে শুধু বিদেশ থেকে টাকা এনে দেশে উগ্রপন্থিদের হাতে তুলে দেওয়া নয়, আইব্যাকস ব্যাংক থেকে আইটি খাতে এক কোটি টাকা ঋণও পেয়েছিল। ২০০৫ সালে আইব্যাকস লিমিটেড বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালু করে। বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। কীভাবে আইব্যাকসের মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে ঋণ পেল, তাতে বিস্মিত গোয়েন্দারা। এনজিওর আড়ালে জঙ্গিদের অর্থায়ন নিয়ে আইব্যাকসের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ সমকালকে বলেন, আইব্যাকসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’জনের ব্যাপারে তথ্য নিতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিবির সহকারী কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী সমকালকে বলেন, আইব্যাকস একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বায়োগ্যাস প্রজেক্টের নামে তিনশ’ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পাঁয়তারা করছিল। এরই মধ্যে ওই ব্যাংককে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে একটি ব্যাংক থেকে আইব্যাকস কোটি টাকা ঋণ নেয়।
আইব্যাকসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘এটি ব্রিটিশ-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে করা কোম্পানি। সম্প্রতি জর্ডানের আম্মানে প্রতিষ্ঠানটি তাদের আরেকটি কার্যালয় খোলে। যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান ও ডেনমার্কেও তাদের কার্যক্রম রয়েছে বলে দাবি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে ড. আতাউল হক নামে এক বাংলাদেশির নাম দেওয়া আছে। তবে গোয়েন্দারা বলছেন, ওয়েবসাইটে আইব্যাকস অনেক মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের নামে জঙ্গি অর্থায়নের নেপথ্যে মূল ভুমিকা পালন করছে আবুল হাসনাতের ছেলে সবুজ।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সবুজ বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর তার বাবা আবুল হাসনাত, শ্যালক সাইফুল হক সুজন, নাহিদউদ্দোজাসহ কয়েকজন তা উগ্রপন্থিদের হাতে তুলে দিতেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কয়েক নেতার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। বিদেশে অবস্থানরত সবুজ ও তার ভাই সুজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে সুজন সিরিয়ায় জীবিত রয়েছেন কি-না এ ব্যাপারেও সন্দিহান গোয়েন্দারা।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগেও নামে-বেনামে জঙ্গিদের অর্থ-সম্পদের তথ্য পান গোয়েন্দারা। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে গুলি করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর জেএমবির কয়েক নেতার বাড়ি-গাড়ির তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। রাহাত ও আজমীর নামে জেএমবির দুই নেতার রাজধানীর কল্যাণপুরে পোশাক কারখানা ছিল। ওই ঘটনার পরই জঙ্গি অর্থায়নের ব্যাপারে সতর্ক হয় গোয়েন্দা পুলিশ।