চামড়া শিল্পের শিক্ষার্থীরা

ট্যানারি মোড় পার হয়ে হাজারীবাগ, সেখানেই দেখা হলো বিরল প্রজাতির বিন্নীগাছের সঙ্গে। শোনা যায়, এককালে নাকি এই গাছের কষ থেকে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করা হতো। কাকতাল হোক অথবা পরিকল্পিত, গাছটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি প্রাঙ্গণে।
নাম শুনে আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠান মনে হলেও এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি অনুষদ। ঢাবি ছাড়াও দেশে কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ আছে। হবু প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলার জন্যই পা রেখেছিলাম সেখানে।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে রয়েছে তিনটি বিভাগ। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সীমিত হলেও তাঁদের জন্য রয়েছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা।
কথা হলো এই বিষয়ের ছাত্র অর্ণবের সঙ্গে। জানালেন, ‘আমাদের এখানে ল্যাবের সংখ্যা চারটি। প্রতিটি ল্যাবেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যবহারিক কাজগুলো আমরা এখানেই করছি।’
Read More News

আধুনিক ল্যাবগুলোর অধিকাংশ যন্ত্রপাতির সংযোজন করা হয়েছে ২০১১ সালে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন, লেদার ও ফুটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন কলাকৌশলের চর্চা চলে এখানে। সেই সঙ্গে দুই মাসব্যাপী ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থাও রয়েছে।
আবার প্রথম বর্ষের আনাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি শুরু থেকেই স্বপ্ন দেখতেন এমন কোনো বিষয়ে পড়ার, যেটা গতানুগতিক মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ভিন্ন। বলছিলেন, ‘আমি এখানে নিজ ইচ্ছাতেই এসেছি। আর বর্তমানে আমাদের দেশে চামড়াশিল্পের চাহিদা অনেক। তাই আমি মনে করি, আমার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না।’
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক আফতাব আলী জানান, ‘আমাদের যাত্রা সবে শুরু হয়েছে। তবু আমরা ছাত্রদের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছি। চেষ্টা করছি যেন বড় বিনিয়োগকারীরা আমাদের ছাত্রদের কর্মসংস্থানের জন্য আরও বেশি আগ্রহী হন।’
প্রতিবছর ১২০ জন শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। ২০১১ সালের আগে আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত এই অনুষদ।
জানা গেল, আগামী বছর থেকে এখানে স্নাতকোত্তর শুরু হবে। স্নাতকোত্তর পেরিয়ে হয়তো শিক্ষার্থীরাই পেয়ে যাবেন নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুযোগ। কারিগরি পেশার ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা আছে। বাটা, এপেক্স কিংবা নতুন উঠে আসা চামড়ানির্ভর করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মুখিয়ে থাকে এমন প্রকৌশলীর জন্য, যাঁদের তত্ত্বের সঙ্গে রয়েছে বাস্তব জ্ঞান। যাঁরা নিজেদের মেধা আর পরিশ্রমে এগিয়ে নেবেন আমাদের চামড়াশিল্পকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *