স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ

২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনাল কেউ ভোলেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ রানে হেরে সাকিব-মুশফিকরা কেঁদেছিলেন। সেই আক্ষেপের সঙ্গে কেঁদেছিল গোটা দেশও। ৪ বছর পর পাকিস্তানকে হারিয়েই এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এবার অবশ্য ফিরে আসছে আরেকটি স্মৃতি। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও হেরে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে আরেকটি আক্ষেপ। তাই এশিয়াকাপের ফাইনালে ঢাকা হবে মেলবোর্ন- এমনটাই প্রত্যাশা। তবে সেটি আক্ষেপে নয়, শেষ হবে টাইগারদের উৎসবের রং নিয়ে। ভারতকে হারাতে পারলে হবে ইতিহাসও। সেই ইতিহাসের অংশ হতে টিকিটের জন্য দর্শকদের হাহাকার, পুলিশের লাঠিচার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে ফাইনালের উত্তেজনা শতভাগ। অধিনায়ক মাশরাফি ভারতকে এগিয়ে রাখলেও স্বপ্ন দেখছেন কিছু করে দেখানোর। তিনি বলেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই ভারতই ফেবারিট। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দিন যার জয় তার। এখানে সবকিছু পক্ষে থাকলেও জয় আসবে এমন কেউ বলতে পারে না।’ আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মিরপুর স্টেডিয়ামে বাঘদের সমর্থনের মাঝে মাঠে নামবে প্রতিপক্ষ ভারত। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম এই শক্তি অবশ্য ফাইনাল না ভেবে একটি সাধারণ ম্যাচ হিসেবে মাঠে নামার কথা জানিয়েছে। তবে যতই সাধারণ বলে ম্যাচে নিজেদের চাপ কমানোর চেষ্টা করুক, বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ভয়েই মাঠে নামবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবারই প্রথম ভারতের বিপক্ষে কোনো আসরে ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ। তা-ও আবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে র‌্যাংঙ্কিয়ে শীর্ষে আছে ধোনির দল। অন্যদিকে এই ফরমেটে বাংলাদেশের অবস্থানটা ১০ নম্বরে। মাশরাফি নিজেও স্বীকার করে নিয়েছেন সত্যিটা। তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু ফাইনাল খেলবো তা ভেবে এই আসর শুরু করিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটি একটি করে ম্যাচ জয় করা। সেটি হয়েছে। ফাইনালেও আমাদের একই লক্ষ্য থাকবে। যেন আমাদের নিজেদের প্রসেসগুলো ঠিক রাখতে পারি।’ ভারতের বিপক্ষে এই পর্যন্ত ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। কোনোটিতেই জয়ের দেখা পায়নি। এবার চতুর্থ ম্যাচে সেই অধরা জয় আসবে- এমনটা মুখ ফুটে না বললেও জয় যে অসম্ভব নয়, তা স্পষ্ট করেন অধিনায়ক। এশিয়াকাপের ফাইনালে মাঠে নামার আগে দলের শক্তি নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, মাহমুদুল্লাহ আছে। যারা যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের দিক পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু আমরা এই পর্যন্ত যত ম্যাচ জিতেছি তা কারও একক পারফরম্যান্সে নয়। আমাদের অন্যতম শক্তি দলীয়ভাবে খেলা, তাহলেই জয় সম্ভব।’
তবে ফাইনাল ম্যাচে আগে দুঃসংবাদ বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান বলের আঘাতে ইনজুরিতে পড়েছেন। যদিও টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন আশা করছেন তিনি আজ খেলতে পারবেন। অন্যদিকে ইনজুরির কারণে দলে নেই মুস্তাফিজুর রহমান। তাকে ছাড়া দল কতটা ভালো করবে সেই বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এটা সত্যি যে আমরা মাঠে মুস্তাফিজকে মিস করবো। দলের সেরা খেলোয়াড়দের একজন ছাড়াই মাঠে নামতে হচ্ছে। কিন্তু আমি আগেও বলেছি বাংলাদেশ এখন এমন একটা জায়গাতে আছে যে দলের সেরা কেউ না থাকলেও কেউ না কেউ সেটি পুষিয়ে নেয়। যেমন তাসকিন ও আল আমিন অনেক ভাল বল করছে।’
অন্যদিকে ভারতের অন্যতম শক্তি বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন আপ। রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কহোলি, যুবরাজ সিং, অধিনায়ক ধোনি যে কোনো মুহূর্তে ব্যাট হাতে গুটিয়ে দিতে পারেন যে কোনো দলের মনোবল। এছাড়া বল হাতে ভুবনেশ্বর কুমার ছাড়াও তরুণ বুমরাহ, অল রাউন্ডার পান্ডিয়াও দলের জন্য দারুণ কার্যকর। তবে ফাইনালে দলে কোনো পরিবর্তন থাকছে কি না তা নিয়ে ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী বলেন, ‘আমরা অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ে পূর্ণ। আপনারা এটাকে শুধু আরেকটি খেলা হিসেবেই দেখুন। কেন এটাকে ফাইনাল হিসেবে দেখা হচ্ছে? সবারই মনোভাব এমন থাকতে হবে যে মনোভাবটা টুর্নামেন্টের অন্য খেলার ক্ষেত্রে ছিল। আমাদের জন্য সবগুলো খেলাই নকআউট। আমরা এটাকে সে মনোভাব নিয়েই দেখছি। আমরা ভিন্ন কোনোভাবে আগামীকালের (আজ) খেলাটিকে দেখবো না।’
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের উইকেট ও কন্ডিশনও একটি নতুন আলোচনার মাত্রা পেয়েছে। তবে উইকেটের নিয়ন্ত্রণ যে ভারতের হাতে নেই আর যে কোনো উইকেটেই তারা খেলতে প্রস্তুত তা স্পষ্ট করেন শাস্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পিচে আমাদের হস্তক্ষেপ নেই। আমাকে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলা হয়েছিল যে সবুজে ঢাকা কিছু একটা পেতে যাচ্ছেন। এ রকমটাই হয়েছে। সুতরাং আগামীকাল (আজ) যেমন উইকেটই থাকুক আমরা খেলার জন্য প্রস্তুত। আমাদের জন্য যে কন্ডিশনই থাকবে আমাদের কাজ হচ্ছে খেলতে নামা। কারণ সবারই বুঝতে হবে যে এখানে একটি দলই খেলছে না, উভয় দলকেই এ ময়দানে খেলতে হবে। সুতরাং এটা পরিচ্ছন্ন একটা খেলাই।’
সবমিলিয়ে আজকের ফাইনালকে সামনে রেখে উত্তেজনায় রীতিমত কাঁপছে বাংলাদেশ। রোমাঞ্চকর এক লড়াই দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট দুনিয়া। স্বপ্নে বিভোর ১৬ কোটি বাংলাদেশি। আজই তৈরি হতে পারে নতুন ইতিহাস।
Read More News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *