ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্সে (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ) বিপর্যয় নেমে এসেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স কমেছে প্রায় ৬ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় ৪৮০ কোটি টাকা। আগের মাস জানুয়ারির তুলনায় কমেছে ২ কোটি ডলার। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে রেমিটেন্স বাড়ার কথা ছিল। কারণ দেশ থেকে জনশক্তি রফতানি বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় এ খাতে বিপর্যয় এসেছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের আয় কমেছে। অনেক কোম্পানি নিয়মিত বেতন দিতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১১৩ কোটি ১৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে। আগের মাস জানুয়ারিতে যা ছিল ১১৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। এছাড়া ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিল ১১৮ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এ হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স কমেছে ৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার। শতকরা হিসাবে যা পাঁচ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর আগের মাস জানুয়ারির তুলনায় কমেছে ২ কোটি ডলার। শতকরা হিসাবে যা এক দশমিক ৬৯ শতাংশ।
Read More News
অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাস জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে প্রবাসীরা ৯৭৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৯২ কোটি ডলার। এ হিসাবে ৮ মাসে রেমিটেন্স কমেছে ১৬ কোটি ডলার। শতকরা হিসাবে যা এক দশমিক শূন্য ৫৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, মোট রেমিটেন্সের ৬৫ শতাংশই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বিভিন্ন দেশ থেকে। এছাড়া মালয়েশিয়ার মুদ্রা রিঙ্গিত এবং আরব আমিরাতের দিরহামের দরপতনে এই দুই দেশ থেকেও রেমিটেন্স কম আসছে। এদিকে বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। গত ২১ জানুয়ারি বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল অশোধিত তেলের দাম ২৬ ডলারে নেমে এসেছিল। গত ১৮ বছরের মধ্যে যা সর্বনিু। ১৯৯৮ সালের পর তেলের দামের এটিই সর্বনিু রেকর্ড। আর তেলের দাম এভাবে কমায় মধ্যপ্রাচ্যের তেল-নির্ভর দেশগুলোর আয় কমেছে। ফলে তারা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না, যা বাংলাদেশের রেমিটেন্সের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
জানতে চাইলে বায়রার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, রেমিটেন্স কমছে। এর বড় কারণ হল জ্বালানি তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। এসব দেশের মুদ্রার মানও কমছে। ফলে টাকা পাঠানো দূরের কথা, ওইসব দেশে কাজ করা শ্রমিকদের চলতেই কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, উদ্বেগের বিষয় হল সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রফতানিও কমছে। বিশেষ করে দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত এবং লিবিয়ার মতো দেশগুলোতে জনশক্তি রফতানি একেবারে কম। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে রেমিটেন্স আরও কমবে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগ জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল মোট দেশজ উৎপাদনের ৮ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের রেমিটেন্সের অবদান ৬৭ শতাংশ। কিন্তু গত এক বছরে যে হারে দেশ থেকে জনশক্তি রফতানি বেড়েছে, ওই হারে রেমিটেন্স বাড়েনি। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে ৯৬ লাখ শ্রমিক কর্মরত। আর ২০০৯ থেকে ’১৩ সাল পর্যন্ত ২৪ লাখ ৫১ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ৬২ বিলিয়ন ডলার। ওই মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন শ্রমিক বিদেশে গেছে। আর ২০১৪ সালে যা ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন। এ হিসাবে এক বছরে জনশক্তি রফতানি বেড়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৯৭ জন। শতকরা হিসাবে যা ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে রেমিটেন্সে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে মাত্র ২ দশমিক ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর অবস্থা খারাপ। এসব দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমছে। ফলে শ্রমের মজুরিও কমছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রেমিটেন্সে। তিনি বলেন, যে পরিমাণ জনশক্তি রফতানি হয়েছে, ওই হারে রেমিটেন্স বাড়েনি।