পূর্ব সাগরে ছয়টি স্বল্প-পাল্লার মিসাইল ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির ব্যাপারে জাতিসংঘ নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় শক্তি প্রদর্শন করতে পিয়ংইয়ং এমন কা- ঘটাল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গতকাল বৃহস্পতিবার মিসাইলগুলো ছোড়ে উত্তর কোরিয়া। বন্দরনগরী ওনসান থেকে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় এগুলো ছোড়া হয়। তবে মিসাইলগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে জানাতে পারেনি সংবাদমাধ্যমগুলো। সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, এগুলো ৩০০ মিলিমিটারের রকেট বা স্বল্প-পাল্লার মিসাইল হতে পারে। সাগরে পড়ার আগে এগুলো ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার উড়ে গেছে।
Read More News
চলতি বছর জানুয়ারি মাসে হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা ও ফেব্রুয়ারিতে রকেট উৎক্ষেপণের কারণে উত্তর কোরিয়ার ওপর দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেছে। এসবের মধ্যে এভাবে মিসাইল ছোড়া আসলে ক্ষমতার প্রদর্শন ছাড়া কিছুই নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ। বুধবার উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীনসহ নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। এর কারণে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের বিরাজমান নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে হাইড্রোজেন বোমা এবং রকেট উৎক্ষেপণে নামে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে নতুন প্রস্তাবে বিরাজমান নিষেধাজ্ঞার আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে রকেট উৎক্ষেপণকে শান্তিপূর্ণ কৃত্রিম উপগ্রহের উৎক্ষেপণ বলে দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া।
দুই দশকে যেকোনো দেশের ওপর আরোপিত জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থেকে এই নিষেধাজ্ঞাটি অনেক কঠোর বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার। নতুন এই নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া পরমাণু ও নিষিদ্ধ অন্যান্য অস্ত্র কর্মসূচির জন্য তহবিল জোগাড় করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিরাপত্তা পরিষদের দুজন কূটনীতিক জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নতুন এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকেও অনেক কঠোর। ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছিল।নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে উত্তর কোরিয়ামুখী এবং দেশটি থেকে বের হওয়া সব মালবাহী যানকে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সিরিয়া, ইরান ও ভিয়েতনামে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যিক প্রতিনিধিসহ ১৬ জনকে নতুন করে কালো-তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার ১২টি প্রতিষ্ঠানকেও এই তালিকায় রাখা হয়েছে। পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞায় দেশটির সন্দেহভাজন মালবাহী যানগুলোকেই শুধু ?পরীক্ষা করা হতো।
নতুন এই কঠোর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার জাতিসংঘ মিশন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সোমবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞাটিকে উত্তর কোরিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম অবমাননা ও মারাত্মক চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে।