ক্ষেতে ধান গাছ বোনার মতো করেই মাথায় চুল বুনে দেবেন চিকিৎসক। যাকে বলা হয় ‘হেয়ার প্ল্যান্টেশন’।অল্প বয়সে চুল পড়ে যাওয়া বর্তমানে অতি সাধারণ সমস্যা। বয়স্করা তো আছেই, ভূক্তভোগীর তালিকায় ২৫ বছর বয়সি তরুণ-তরুণীদেরও দেখা যায়। ঘুম ও খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি অল্পবয়সে চুল পড়ে যাওয়ার মূল কারণ। চুল পড়ে গিয়ে মাথায় জেগে ওঠা দ্বীপটাকে ঢেকে দেওয়ার সর্বশেষ উপায় ‘হেয়ার প্ল্যান্টেশন’ বা চুল পুনঃস্থাপন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং অধ্যাপক ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান জানাচ্ছেন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি।
Read More News
চুল প্রতিস্থাপনের দুই ধরনের প্রক্রিয়ার কথা জানালেন ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান।
তিনি বলেন, “ইনভেসিভ অ্যান্ড সেমি-ইনভেসিভ। ইনভেসিভ পদ্ধতিতে মাথায় পুরোমাত্রায় অস্ত্রোপচার করা হয়। আর সেমি ইনভেসিভ প্রক্রিয়ার পুরোপুরি অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় না।
সেমি-ইনভেসিভ: এ পদ্ধতিতে দুইধরনের চিকিৎসার কথা জানালেন ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান, মেজো থেরাপি এবং প্লেটলেট রিচ প্লাজমা (পিআরপি)।
তিনি বলেন, “অল্পবয়সেই যাদের চুল পড়ে গেছে, কিন্তু চুলের গোড়ার ‘হেয়ার ফলিকল’গুলো এখনও সুস্থ আছে তাদেরকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়।”
চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “চুল বেড়ে ওঠার জন্য কিছু ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর’ প্রয়োজন হয়। এই ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর’গুলো পরীক্ষাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করে রোগীর মাথায় দিয়ে দেই। পিআরপি থেরাপিতে গ্রোথ ফ্যাক্টর তৈরি করা হয় রোগীর রক্ত থেকে সংগৃহীত অনুচক্রিকা থেকে। আর মেজো থেরাপিতে ‘গ্রোথ ফ্যাক্টর’গুলো কিনে নিতে হয়। আর মাথার ত্বকের প্রয়োগ করা হয় সুঁই কিংবা ‘মেজো গান’ নামক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে, যা মাথার ত্বক ফুটো করে ফ্যাক্টরগুলো চুলের গোড়ায় পৌছে দেয়।”
প্রাথমিকভাবে মেজো থেরাপি এবং পিআরপি চিকিৎসা নিতে হবে সাত থেকে আটটি সেশনে। পরের বছরে একদুটি সেশন প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসা এবং ওষুধসহ প্রতি সেশনে খরচ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।
ইনভেসিভ: এ বিষয়ে চিকিৎসক বলেন, “যাদের বয়স ৪০ বছরের বেশি, বংশগত অ্যলোপেসিয়া, ‘মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস’ ইত্যাদিতে আক্রান্ত, তাদের চুলের ‘ফলিকল’গুলো সাধারণত সুস্থ থাকে না। তাই এক্ষেত্রে ইনভেসিভ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে এজন্য রোগীর শারীরিক অবস্থা, রোগবালাই, বয়স ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় খেয়াল রাখতে হয়।
অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়াটির বিস্তারিত বর্ণণা দেন এই চিকিৎসক।
এ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথার পেছন এবং দুই কানের উপরের অংশ থেকে চুল নিয়ে টাক পড়ে যাওয়া অংশে বসিয়ে দেওয়া হয়। দুইভাবে কাজটি করা হয়। একটি হল ‘ফলিকুলার ইউনিট ট্রান্সপ্ল্যান্ট’, এ পদ্ধতিতে একটি করে চুল নিয়ে টাক পড়ে যাওয়া অংশে বসানো হয়।
আরেকটি হল ‘স্ট্রিপ’ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে চুল আছে এমন অংশ থেকে চামড়া কেটে নেওয়া হয়। এই কাটা চামড়াকে বলা হয় ‘স্ট্রিপ’। স্ট্রিপটিকে আবার ছোট করে কেটে এক থেকে তিনটি চুলের স্ট্রিপে পরিণত করা হয়।
সবশেষে টাক পড়ে যাওয়া অংশে ছুরি কিংবা সুঁই দিয়ে ছোট গর্ত তৈরি করে সেখানে স্ট্রিপগুলো বসিয়ে দেয়া হয়।
এই পদ্ধতিতে খরচের হিসাব করা হয় চুল প্রতি ১শ’ টাকা হিসেবে।
ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান বলেন, “চুল প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে এই চিকিৎসার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে ঘন কালো চুল হয় না। তবে মাথার ফাঁকা অংশ ঢাকা যায়। আর ঘন চুল পেতে চাইলে অস্ত্রোপচার করাতে হবে একাধিকবার। যা শরীরের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি খরচও অনেক।”