এটিএম কেলেঙ্কারিতে এবার বেরিয়ে আসছে খোদ পুলিশবাহিনীর কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যের নাম! কাঁচা টাকার লোভ সামলাতে না পেরে তারা জড়িয়ে পড়েছিলেন জালিয়াতির অন্যতম হোতা বিদেশি নাগরিক শজেপ্যান মাজুরেক ওরফে পিওটরের সঙ্গে। এরই মধ্যে পিওটরের সঙ্গে গুলশান বিভাগের একটি থানার পরিদর্শকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তাকে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপি সদর দফতর ও গুলশান বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা। অন্যদিকে, আজ শেষ হচ্ছে পিওটরসহ চারজনের ছয় দিনের রিমান্ড। তবে পিওটরের দেওয়া তথ্য যাচাই ও তদন্তের স্বার্থে দ্বিতীয় দফায় আদালতের কাছে পুনরায় তার ১০ দিনের রিমান্ড চাইবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনা বাংলাদেশে এবারই প্রথম। এ ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। চমকপ্রদ তথ্য পাচ্ছি আমরা। সেই সঙ্গে দেশি-বিদেশি আর কোন কোন চক্র এসব ঘটনায় জড়িত, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে।’ গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পুলিশ সূত্রমতে, পিওটরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক ছিল পুলিশের ওই কর্মকর্তার। তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে। পিওটরের চার চাকার অভিজাত মোটরবাইকে করে ওই কর্মকর্তা রাতের বেলায় ভ্রমণে বের হতেন। ওই কর্মকর্তার ‘টয়োটা রেভ-৪’ গাড়িতে করেও তারা ঘুরে বেড়াতেন। আড্ডা দিতেন রাজধানীর অভিজাত রেস্টুরেন্টে। শুধু তাই নয়, মাঝেমধ্যেই গুলশান বিভাগের ওই থানার ভিতরেও তাদের জম্পেশ আড্ডা দিতে দেখা গেছে। পিওটরের সঙ্গে ওই কর্মকর্তার বিশেষ সম্পর্কের বিষয়টি থানায় অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ছিল। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, শুধু বাংলাদেশিই নয়, বিদেশি বিভিন্ন চক্রও এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এটি আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে সক্ষমতাও। এ ধরনের জালিয়াতি বন্ধে আইন প্রণয়নেরও প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দেন তিনি। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, পিওটরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এমন অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী, ব্যাংকারের নাম পাওয়া যাচ্ছে। এদের অনেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। তবে কার্ড জালিয়াতিতে পিওটরের ভিন্ন ভিন্ন কৌশল বার বার অবাক করছে তাদের। পিওটর গ্রেফতার না হলে দেশের ব্যাংকিং খাতে কিছুদিন পরপরই একের পর এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটত। কারণ অনুসন্ধান করে ওইসব ঘটনা ঠেকাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হতো ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। প্রসঙ্গত, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয় চক্রটি। টাকা হাতিয়ে নিতে তারা স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের গোপন তথ্য চুরি করে। এরপর ঘটনার শিকার ২১ জন সাধারণ গ্রাহক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল), সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে টনক নড়ে। এ সেক্টরের কড়া নিরাপত্তা সুরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকও দ্রুত এগিয়ে আসে। ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি দল পিওটরসহ সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে সোমবার গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয়।
Read More News