একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আশা করি, তিনি বেকসুর খালাস পাবেন।
আজ বুধবার দুপুরে এ মামলার আপিলের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মীর কাসেমের আইনজীবী।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এ মামলায় মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনাল দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। একটিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে জসিম নামের একজনকে নির্যাতন করে হত্যা করেন মীর কাসেম আলী। কিন্তু ওই দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন বলে প্রসিকিউশনের দেওয়া পত্রিকায় উল্লেখ রয়েছে। তাহলে মীর কাসেম আলী কীভাবে হত্যা করবেন। এ ছাড়া মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রামে ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না।
Read More News
“এমনকি একটি মামলাও হয়নি। তখন তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু এর পর থেকে তিনি তো ঢাকায় ছিলেন। এ ছাড়া নিহত জসিমের মামাতো বোন হাসিনা আক্তার ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘স্বীকৃতি’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তখন তিনি তাঁর কোনো কলামে মীর কাসেম আলী তাঁর ভাইকে হত্যা করেছেন তাঁর কোনো উল্লেখ করেননি”, বলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
মীর কাসেম আলীর আইনজীবী আরো বলেন, ‘এ ছাড়া ডালিম হোটেলে স্বপন নামের এক ব্যক্তি খাওয়ার পরিবেশন করত। সে ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি। আদালতও বলেছে, এ মামলায় প্রসিকিউশন মামলা পরিচালনার জন্য তথ্য-উপাত্ত দিতে পরেনি। তাই আমরা আশা করি, মীর কাসেম আলী বেকসুর খালাস পাবেন। কেননা প্রসিকিউশন যখন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়, তখন ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এর আইনি সুবিধা আসামি পেয়ে থাকেন।’
মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীর শুনানি শেষে আপিলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান।
প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে মীর কাসেম আলীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সমাপনী বক্তব্য দেন। আদালত এ মামলার চূড়ান্ত রায়ের জন্য আগামী ২ মার্চ দিন রাখেন।
এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি হলো সপ্তম মামলা।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে আপিল করেন জয়নুল আবেদীন তুহিন। মীর কাসেমের পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন আনা মোট ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। এগুলো হলো ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে দুটিতে (১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ) মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারটি অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়। ১১ ও ১২ নম্বর ছাড়া বাকি ১২টি অভিযোগই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে।
প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৩, ৪,৬,৭,৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সাত বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই আটটি অভিযোগে তাঁকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেওয়া হয়।