তাদের ফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসাটাই যেন অনেকের কাছে বিস্ময়ের। আর প্রতিটা ধাপেই সেই বিস্ময়কে আর এক সুর উঁচুতে বাঁধছেন ক্যারিবীয় যুবারা। জিম্বাবুয়ের কাছে হারতে হারতে ‘বিতর্কিত’ মানকাড আউটে নকআউট পর্বে ওঠে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ ফাইনালেও দুর্দান্ত শুরু করেছে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপটাকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে। মাত্র ৮৭ রানেই ভারত হারিয়েছে ৬ উইকেট!
শুধু আউট করাই নয়, ক্যারিবীয় বোলিংয়ের যেন জবাব খুঁজে পাচ্ছে না আগামীর বিরাট কোহলিরা। ৩০ ওভার শেষেও রান রেট তিনেরও নিচে! প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র সরফরাজ খানই যা একটু লড়ছেন। ২৯ রানে অপরাজিত আছেন। বাকি পাঁচজনের কেই দুই অঙ্কই ছুঁতে পারেননি। এই পাঁচজনের মিলিত রান মাত্র ২০!
প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী বোলার জোসেপ। মাত্র ১৯ বলের মধ্যে ভারতের প্রথম তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন। বাকি তিন উইকেট হোল্ডার, জন আর স্প্রিংগারের। টুর্নামেন্টে রান বন্যা বইয়ে দেওয়া ভারত একেকটি রানের জন্য কী রকম ধুঁকছে!
বিশ্বকাপের আগেও বাংলাদেশের কাছে তিন ম্যাচ সিরিজে ধবল ধোলাই হয়েছিল এই ওয়েস্ট ইন্ডিজই। উপমহাদেশীয় কন্ডিশন যেন দুর্বোধ্য এক ধাঁধা হয়ে এসেছিল তাঁদের কাছে। গ্রুপ পর্বে দুই শক্ত প্রতিপক্ষের ম্যাচেও সাবলীল ছিল না। জেতার জন্য শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের ১ উইকেটে ৩ রান লাগে, এমন পরিস্থিতিতে বল না করেই আউট (মানকাড) করে কোয়ার্টার ফাইনাল।
Read More News
সেখান থেকেই যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বদলে যাওয়া শুরু। প্রথমে পাকিস্তানকে হারিয়ে এক যুগ আগের বদলা নিল। ২০০৪ সালে এই বাংলাদেশে আয়োজিত যুব বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল তারা। সেবার হারতে হয়েছিল পাকিস্তানের কাছে। সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় দুই ফেবারিটের একটি। এবার বাংলাদেশকেও বোলিং দিয়ে কাঁপিয়ে দিয়ে ফাইনালে।
ফাইনালে ভারত, যাদের কাছে শ্রীলঙ্কা আর নামিবিয়ার কোনো পার্থক্য নেই বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসা ক্যারিবীয় অধিনায়ক হেটমায়ার গতকাল খুব সত্যি একটা কথা বলেছেন, বাংলাদেশও কিন্তু অপরাজিত থেকেই মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ক্রিকেটে নির্দিষ্ট দিনে যে ভালো খেলে, সেই ফেবারিট।
আজ যেন শুরু থেকে সেটাই প্রমাণ করার প্রতিজ্ঞায় তারা। সাত সকালেই আগুন ঝরালেন জোসেপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই উদ্বোধনী বোলার নিজের প্রথম চার ওভারে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে ১৯ বলের মধ্যেই তুলে নিলেন তিন উইকেট। মাঝখানে খানিক প্রতিরোধ গড়লেও ৭ রান করে ফিরলেন ওয়াশিংটন সুন্দরও, জনের শিকার হয়ে। খানিক পরে সাত রান করে ফিরেছেন জাফরও। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়ে ভারত শেষ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু একপ্রান্ত থেকে দুর্দান্ত বোলিং করেও উইকেটের দেখা না পাওয়া হোল্ডার অবশেষে প্রাপ্য পুরস্কার পেতেই ভেঙেছে সেই জুটি।
জোসেপ ১০ ওভারে ৩৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। ইকোনমি রেট চারেরও নিজে। তবু তিনিই সবচেয়ে ‘খরুচে’! হোল্ডার ৯ ওভারে দিয়েছেন ১৫ রান দিয়ে ১ উইকেট। ফিরতি স্পেলে টানা দুটি মেডেন। ইকোনমি রেট ১.৬৬! স্প্রিংগার ৬ ওভারে ৮ রান দিয়ে ১ উইকেট।
ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান সরফরাজ এখন পাল্টা প্রতিরোধ গড়তে পারেন কি না, সেটাই দেখার।